- দিদি অ্যাই দিদি?
- দিদিরে? একবার ওঠনা
- কিরে তুই এখনো ঘোমাসনি? অনেক রাত হল সোনাই, এবার শুয়ে পড়
- না আমি শোব না, একবার কুপিটা জ্বালা না
- কুপি? কেন? কি হয়েছে? হিসি পেয়েছে?
- না আমার খুব খিদে পেয়েছে, দেখনা দিদি খুঁজে যদি কিছু পাস
- কুপি জ্বালালে মা বকবে সোনাই, তেল নেই তো, কাল থেকে তাহলে আর আলো পাব না রাতে। তখন কি হবে?
- দিদি আমার খুব খিদে পাচ্ছে।
- এখুনি? এই তো রাতে খেয়ে শুলি?
- সে তো খালি গুড়ের ডেলা, ও তে হয় নাকি?
- তবে? জল খাবি সোনাই?
- অনেক খেয়েছিলুম শোবার আগে, দেখ পেটের ভিতর খলবল করছে। কিন্তু দিদি জল খাবার কিছুক্ষন পরেই আমার আবার খিদে পেয়ে যায়।
- আচ্ছা শোন না, দেখ ভোর তো হয়েই এল, সকালে উঠেই মাকে বলব তোকে অনেক খেতে দিতে। আয় এবার শো, আমি হাত বুলিয়ে দিই মাথায়।
- ধুত, এই তো শুলুম, এখনো কারখানার ভোঁ অবধি বাজে নি, অ দিদি ভোর হতে এখন ও অনেক দেরী। আমার পেটের ভিতরটা কেমন চিনচিন করছে।
- কি খাবি বল তো? এখন তো ঘরে কিছু নেই সোনাই
- দেখনা খুঁজে, কালকের কিছু পরে নেই?
- না সোনাই, থাকলে তো তোকেই আমি দিতাম রাতের খাবার সময়
- সোনাই? কিরে কি হল?
- সোনাই? ছিঃ কাঁদেনা সোনা। আচ্ছা শোননা তুমি কি জান, কাল বড় লরি যাবার দিন
- কাল? পচাই বলছিল বড় লরি আর আসবেনা
- পচাই? পচাই কিছু জানে না। আমি দেখলুম আজ খুরিদারা সেই কারেন্টের তারগুলো ঝুলিয়ে দিচ্ছে।
- কোথায়?
- ওই তো মুড়িতলার কাছে, ওরা বলছিল, লরি ভর্তি ফুলকপি আসবে, অনেক পাতা তারে লেগে ছিঁড়ে পড়বে। কাল তোকে ওগুলো এনে আমি চচ্চড়ি খাওয়াব।
- তাই? ঠিক বলছিস, সত্যি?
- একদম, আমি তোকে কোনদিন মিথ্যে কথা বলেছি?
- কিন্তু দিদি খিদে ফেলে আমার একটুও ঘুম আসেনা
- গল্প শুনবি সোনাই? গল্প শুনলে তুই ঘুমিয়ে পড়িস
- না, গল্প শুনলে আমার আরো খিদে পায়
- না না এটা অন্য রকম গল্প, এটা পুরো শুনলে আকাশ থেকে একটা বড় রথে করে এক রাজপুত্র নেমে আসবে অনেক খাবার নিয়ে
- সত্যি?
- ওমা তুই যে উঠে বসলি?
- বলনা দিদি সত্যি আসবে? আমি তাহলে চুপ করে শুনবো
- হ্যাঁ আসবে, কিন্তু চোখ বুজে শুনতে হবে
- আচ্ছা বল, একটু ছোট করে বলবি দিদি
- শোন, এক দেশে এক বন্দী রাজপুত্র ছিল। রাজপুত্রের মা ছিল দুয়োরানী। সুয়োরানী যে ছিল তার কাছেই রাজা সারাদিন থাকেন। কাজকর্ম কিছু করেন না, শিকার করেন না, প্রজাদের দেখাশোনাও করেন না শুধু সূয়োরানীর মহলে গান বাজনা করেন। সুয়োরানীর কোন ছেলে নেই, তাই রাজপুত্রের উপর সূয়োরানীর খুব রাগ।
- তারপর?
- শোন না, এদিকে একা একা কারাগারে রাজপুত্রের খুব ভয়।
- আর রাজপুত্রের খিদে পায়না?
- পায় তো, সুয়োরানী তো কিচ্ছু খেতে দেয়না, একদিন রাতের বেলা খুব খিদে পেলে রাজপুত্র চোখ বুজে ভগবান কে ডাকল।
- দিদি!
- বারবার বিরক্ত করলে কিন্তু আমি গল্প বলব না।
- দিদি রথ চলে এসেছে, আকাশে রথ চলে এসেছে।
- কি?
- শুনতে পাচ্ছিস না, দেখ কিরকম গোঁ গোঁ আওয়াজ হচ্ছে, রথের আওয়াজ, রাজপুত্র খাবার নিয়ে এসেছে।
- সোনাই কোথায় চললি?
- বাইরে দিদি, দৌড়ে আয়, রথ দেখবি না?
- দেখ দিদি পচাই দাঁড়িয়ে, অ্যাই পচাই রথ কোথায় রে?
- দেখ সোনাই, একটা বড় এরোপ্লেন আকাশে চরকি খাচ্ছে
- এরোপ্লেন? তুই যে বললি রাজপুত্র রথে আসবে।
- এই পচাই তুই রাত্রে খেয়ে নিয়েছিস? এবার রাজপুত্র যে খাবার নিয়ে আসবে কি করবি?
- দেখ দিদি এরোপ্লেন থেকে কি সব ফেলে দিচ্ছে? খাবার নাকি দিদি?
- দিদি আমাদের বাড়িতে কেন ফেলছে না রে কিছু?
- ওই দেখ সোনাই, আমাদের বাড়ির পেছনের কচুঝোপে পড়েছে একটা, চ চ দৌড়ে চ।
- সোনাই দেখে পা ফেলিস, মা বলছিল এখানে প্রচুর বিছুটি হয়েছে
- দিদি কি অন্ধকার, কিছু দেখতে পাচ্ছিনা
- এই দেখ সোনাই কি বড় বন্দুক। ঐ এরোপ্লেন থেকে ফেলল নাকি?
- দিদি আমিও পেয়েছি কিন্তু এটা বন্দুক নয় , এই দেখ এটা কি করে খায় রে?
- এই মুখে দিস না ওগুলো। ধুর বোকা ছেলে, এগুলো খায় নাকি? ওগুলো তো গুলি, বন্দুকে করে ছোঁড়ে
- অ্যাই সোনাই কোথায় ছুঁড়ে ফেলে দিলি?
- তুই ভীষন মিথ্যুক দিদি, তুই যে বললি রাজপুত্র খাবার নিয়ে আসবে। আমার আবার খিদে পাচ্ছে দিদি। কি সব গুলি বন্দুক - এর থেকে গুড়ের ডেলাই ভালো।
“গতকাল রাত্রে এই পুরুলিয়ার বেলামু গ্রামে এক বিমান থেকে কয়েকশো এ কে ৪৭ বন্দুক এবং দশ লক্ষ রাউন্ডের বেশী কার্তুজ ফেলা হয়েছে। ভারতীয় বিমানবাহিনী থেকে জানানো হয়েছে বিমানটি লাতভিয়ার ছিল। তবে কি উদ্দেশ্যে এই অস্ত্রবৃষ্টি তা এখনো ধোঁয়াশায় ঢাকা। কেউ কেউ মনে করছেন বিচ্ছিন্নবাদী শক্তিকে সাহায্য করার জন্যই এ এক প্রাতিবেশী রাষ্ট্রের চক্রান্ত। আজ মুখ্যমন্ত্রী এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে...”
- দিদিরে? একবার ওঠনা
- কিরে তুই এখনো ঘোমাসনি? অনেক রাত হল সোনাই, এবার শুয়ে পড়
- না আমি শোব না, একবার কুপিটা জ্বালা না
- কুপি? কেন? কি হয়েছে? হিসি পেয়েছে?
- না আমার খুব খিদে পেয়েছে, দেখনা দিদি খুঁজে যদি কিছু পাস
- কুপি জ্বালালে মা বকবে সোনাই, তেল নেই তো, কাল থেকে তাহলে আর আলো পাব না রাতে। তখন কি হবে?
- দিদি আমার খুব খিদে পাচ্ছে।
- এখুনি? এই তো রাতে খেয়ে শুলি?
- সে তো খালি গুড়ের ডেলা, ও তে হয় নাকি?
- তবে? জল খাবি সোনাই?
- অনেক খেয়েছিলুম শোবার আগে, দেখ পেটের ভিতর খলবল করছে। কিন্তু দিদি জল খাবার কিছুক্ষন পরেই আমার আবার খিদে পেয়ে যায়।
- আচ্ছা শোন না, দেখ ভোর তো হয়েই এল, সকালে উঠেই মাকে বলব তোকে অনেক খেতে দিতে। আয় এবার শো, আমি হাত বুলিয়ে দিই মাথায়।
- ধুত, এই তো শুলুম, এখনো কারখানার ভোঁ অবধি বাজে নি, অ দিদি ভোর হতে এখন ও অনেক দেরী। আমার পেটের ভিতরটা কেমন চিনচিন করছে।
- কি খাবি বল তো? এখন তো ঘরে কিছু নেই সোনাই
- দেখনা খুঁজে, কালকের কিছু পরে নেই?
- না সোনাই, থাকলে তো তোকেই আমি দিতাম রাতের খাবার সময়
- সোনাই? কিরে কি হল?
- সোনাই? ছিঃ কাঁদেনা সোনা। আচ্ছা শোননা তুমি কি জান, কাল বড় লরি যাবার দিন
- কাল? পচাই বলছিল বড় লরি আর আসবেনা
- পচাই? পচাই কিছু জানে না। আমি দেখলুম আজ খুরিদারা সেই কারেন্টের তারগুলো ঝুলিয়ে দিচ্ছে।
- কোথায়?
- ওই তো মুড়িতলার কাছে, ওরা বলছিল, লরি ভর্তি ফুলকপি আসবে, অনেক পাতা তারে লেগে ছিঁড়ে পড়বে। কাল তোকে ওগুলো এনে আমি চচ্চড়ি খাওয়াব।
- তাই? ঠিক বলছিস, সত্যি?
- একদম, আমি তোকে কোনদিন মিথ্যে কথা বলেছি?
- কিন্তু দিদি খিদে ফেলে আমার একটুও ঘুম আসেনা
- গল্প শুনবি সোনাই? গল্প শুনলে তুই ঘুমিয়ে পড়িস
- না, গল্প শুনলে আমার আরো খিদে পায়
- না না এটা অন্য রকম গল্প, এটা পুরো শুনলে আকাশ থেকে একটা বড় রথে করে এক রাজপুত্র নেমে আসবে অনেক খাবার নিয়ে
- সত্যি?
- ওমা তুই যে উঠে বসলি?
- বলনা দিদি সত্যি আসবে? আমি তাহলে চুপ করে শুনবো
- হ্যাঁ আসবে, কিন্তু চোখ বুজে শুনতে হবে
- আচ্ছা বল, একটু ছোট করে বলবি দিদি
- শোন, এক দেশে এক বন্দী রাজপুত্র ছিল। রাজপুত্রের মা ছিল দুয়োরানী। সুয়োরানী যে ছিল তার কাছেই রাজা সারাদিন থাকেন। কাজকর্ম কিছু করেন না, শিকার করেন না, প্রজাদের দেখাশোনাও করেন না শুধু সূয়োরানীর মহলে গান বাজনা করেন। সুয়োরানীর কোন ছেলে নেই, তাই রাজপুত্রের উপর সূয়োরানীর খুব রাগ।
- তারপর?
- শোন না, এদিকে একা একা কারাগারে রাজপুত্রের খুব ভয়।
- আর রাজপুত্রের খিদে পায়না?
- পায় তো, সুয়োরানী তো কিচ্ছু খেতে দেয়না, একদিন রাতের বেলা খুব খিদে পেলে রাজপুত্র চোখ বুজে ভগবান কে ডাকল।
- দিদি!
- বারবার বিরক্ত করলে কিন্তু আমি গল্প বলব না।
- দিদি রথ চলে এসেছে, আকাশে রথ চলে এসেছে।
- কি?
- শুনতে পাচ্ছিস না, দেখ কিরকম গোঁ গোঁ আওয়াজ হচ্ছে, রথের আওয়াজ, রাজপুত্র খাবার নিয়ে এসেছে।
- সোনাই কোথায় চললি?
- বাইরে দিদি, দৌড়ে আয়, রথ দেখবি না?
- দেখ দিদি পচাই দাঁড়িয়ে, অ্যাই পচাই রথ কোথায় রে?
- দেখ সোনাই, একটা বড় এরোপ্লেন আকাশে চরকি খাচ্ছে
- এরোপ্লেন? তুই যে বললি রাজপুত্র রথে আসবে।
- এই পচাই তুই রাত্রে খেয়ে নিয়েছিস? এবার রাজপুত্র যে খাবার নিয়ে আসবে কি করবি?
- দেখ দিদি এরোপ্লেন থেকে কি সব ফেলে দিচ্ছে? খাবার নাকি দিদি?
- দিদি আমাদের বাড়িতে কেন ফেলছে না রে কিছু?
- ওই দেখ সোনাই, আমাদের বাড়ির পেছনের কচুঝোপে পড়েছে একটা, চ চ দৌড়ে চ।
- সোনাই দেখে পা ফেলিস, মা বলছিল এখানে প্রচুর বিছুটি হয়েছে
- দিদি কি অন্ধকার, কিছু দেখতে পাচ্ছিনা
- এই দেখ সোনাই কি বড় বন্দুক। ঐ এরোপ্লেন থেকে ফেলল নাকি?
- দিদি আমিও পেয়েছি কিন্তু এটা বন্দুক নয় , এই দেখ এটা কি করে খায় রে?
- এই মুখে দিস না ওগুলো। ধুর বোকা ছেলে, এগুলো খায় নাকি? ওগুলো তো গুলি, বন্দুকে করে ছোঁড়ে
- অ্যাই সোনাই কোথায় ছুঁড়ে ফেলে দিলি?
- তুই ভীষন মিথ্যুক দিদি, তুই যে বললি রাজপুত্র খাবার নিয়ে আসবে। আমার আবার খিদে পাচ্ছে দিদি। কি সব গুলি বন্দুক - এর থেকে গুড়ের ডেলাই ভালো।
“গতকাল রাত্রে এই পুরুলিয়ার বেলামু গ্রামে এক বিমান থেকে কয়েকশো এ কে ৪৭ বন্দুক এবং দশ লক্ষ রাউন্ডের বেশী কার্তুজ ফেলা হয়েছে। ভারতীয় বিমানবাহিনী থেকে জানানো হয়েছে বিমানটি লাতভিয়ার ছিল। তবে কি উদ্দেশ্যে এই অস্ত্রবৃষ্টি তা এখনো ধোঁয়াশায় ঢাকা। কেউ কেউ মনে করছেন বিচ্ছিন্নবাদী শক্তিকে সাহায্য করার জন্যই এ এক প্রাতিবেশী রাষ্ট্রের চক্রান্ত। আজ মুখ্যমন্ত্রী এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে...”